যীশুর শেষ দুঃখভোগ ও মৃত্যু।
২২
১ তখন খামিরহীন রুটির পর্ব, যাকে নিস্তারপর্ব্ব বলে, কাছাকাছি ছিল; ২ আর প্রধান যাজকেরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকেরা কীভাবে তাঁকে হত্যা করতে পারে, তারই চেষ্টা করছিল, কারণ তারা লোকদের ভয় করত।
ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদার বিশ্বাসঘাতকতা।
৩ আর শয়তান ঈষ্করিয়োতীয় নামে যিহূদার ভিতরে প্রবেশ করল, এ সেই বারো জনের একজন। ৪ তখন সে গিয়ে প্রধান যাজকদের ও সেনাপতিদের সাথে কথাবার্তা বলল, কীভাবে তাঁকে তাদের হাতে সমর্পণ করতে পারবে। ৫ তখন তারা আনন্দিত হল ও তাকে টাকা দিতে প্রতিজ্ঞা করল। তাতে সে রাজি হল এবং ৬ জনতার নজরের বাইরে তাঁকে ধরিয়ে দেবার সুযোগ খুঁজতে লাগল।
নিস্তারপর্ব্ব ও প্রভুর ভোজ পালন
৭ পরে খামিরহীন রুটির দিন, অর্থাৎ যে দিন নিস্তারপর্ব্বের মেষশাবক বলি দিতে হত, সেই দিন আসল। ৮ তখন তিনি পিতর ও যোহনকে পাঠিয়ে দিয়ে বললেন, তোমরা গিয়ে নিস্তারপর্ব্বের ভোজ প্রস্তুত কর, আমরা ভোজন করব। ৯ তারা বললেন, কোথায় প্রস্তুত করব? ১০ আপনার ইচ্ছা কি? তিনি তাদেরকে বললেন, দেখ, তোমরা সবাই শহরে ঢুকলে এমন একজন লোকের দেখা পাবে, যে একটা কলসিতে করে জল নিয়ে যাচ্ছে; তোমরা তার পেছনে পেছনে যেও; সে যে বাড়িতে ঢুকবে। ১১ আর সেই বাড়ির মালিককে বোলো, গুরু বলেছেন, যেখানে আমি আমার শিষ্যদের সঙ্গে নিস্তারপর্ব্বের ভোজ খেতে পারি, আমার সেই অতিথিশালা কোথায়? ১২ তাতে সে তোমাদের সাজানো একটি ওপরের বড় ঘর দেখিয়ে দেবে; ১৩ সেই জায়গায় প্রস্তুত কর। তারা গিয়ে, তিনি যেরকম বলেছিলেন, সেরকম দেখতে পেলেন; পরে তাঁরা নিস্তারপর্ব্বের ভোজ তৈরী করলেন। ১৪ পরে সময় হলে তিনি ও প্রেরিতরা একসঙ্গে ভোজে অংশগ্রহণ করলেন। ১৫ তখন তিনি তাদের বললেন, আমার দুঃখভোগের আগে তোমাদের সাথে আমি এই নিস্তারপর্ব্বের ভোজ ভোজন করতে আমি খুব ইচ্ছা করছি; ১৬ কারণ আমি তোমাদের বলছি, যে পর্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্যে এ পূর্ণ না হয়, সেই পর্যন্ত আমি এ আর ভোজন করব না। ১৭ পরে তিনি পানপাত্র নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, এটা নাও এবং নিজেদের মধ্যে ভাগ কর; ১৮ কারণ আমি তোমাদের বলছি, যে পর্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্যের আগমন না হয়, এখন থেকে সেই পর্যন্ত আমি আঙ্গুর ফলের রস পান করব না। ১৯ পরে তিনি রুটী নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে ভাঙলেন এবং তাদেরকে দিলেন, আর বললেন, “ এটা আমার শরীর যেটা তোমাদের দেওয়া হয়েছে।” এটি আমার স্মরণে কর।” ২০ আর সেইভাবে তিনি খাওয়ার পর পানপাত্রও নিয়ে বললেন, এই পানপাত্র আমার রক্তের নতুন নিয়ম, যে রক্ত তোমাদের জন্য বাহিত হয়। ২১ কিন্তু দেখ, যে ব্যক্তি আমাকে সমর্পণ করছে, তার হাত আমার সঙ্গে টেবিলের উপরে রয়েছে। ২২ কারণ যেমন নির্ধারিত হয়েছে সেই অনুসারেই মানবপুত্র যাচ্ছেন, কিন্তু ধিক সেই ব্যক্তিকে, যার মাধ্যমে তিনি সমর্পিত হন। ২৩ তখন্ তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, তবে আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করবে? ২৪ আর তাদের মধ্যে এই নিয়ে তর্ক শুরু হল যে, তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য। ২৫ কিন্তু তিনি তাদের বললেন, অইহূদিদের রাজারাই তাদের উপরে প্রভুত্ব করে এবং তাদের উপর যার কর্তৃত্ব থাকে তাকে সম্মানীয় শাসক বলে। ২৬ কিন্তু তোমরা সেই রকম হয়ো না; বরং তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ, সে ছোটোর মত হোক; এবং যে প্রধান, সে দাসের মত হোক। ২৭ কারণ, কে শ্রেষ্ঠ? যে ভোজনে বসে, না পরিবেশন করে? যে ভোজনে বসে সেই কি না? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে দাসের মত আছি। ২৮ তোমরাই আমার সব পরীক্ষায় তো আমার সঙ্গে রয়েছ; ২৯ আর আমার পিতা যেমন আমার জন্য নির্ধারণ করেছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য এক রাজ্য নির্ধারণ করছি, ৩০ যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমার সঙ্গে ভোজন পান কর; আর তোমরা সিংহাসনে বসে ইস্রায়েলের বারো বংশের বিচার করবে। ৩১ শিমোন, শিমোন, দেখ, গমের মত চেলে বের করার জন্য শয়তান তোমাদের নিজের বলে চেয়েছে; ৩২ কিন্তু আমি তোমার জন্য প্রার্থনা করেছি, যেন তোমাদের বিশ্বাসে ভাঙ্গন না ধরে; আর তুমিও একবার ফিরলে পর তোমার ভাইদের সুস্থির করও। ৩৩ তিনি তাকে বললেন, প্রভু, আপনার সঙ্গে আমি কারাগারে যেতে এবং মরতেও রাজি আছি। ৩৪ তিনি বললেন, পিতর আমি তোমাকে বলছি, যে পর্যন্ত তুমি আমাকে চেন না বলে তিনবার অস্বীকার করবে, সেই পর্যন্ত আজ মোরগ ডাকবে না। ৩৫ আর তিনি তাদের বললেন, আমি যখন থলি, ঝুলি ও জুতো ছাড়া তোমাদের পাঠিয়েছিলাম, তখন কি কিছুরই অভাব হয়েছিল? তারা বললেন কিছুই না। ৩৬ তখন তিনি তাদের বললেন, এখন যার থলি আছে, সে তা নিয়ে যাক, সেইভাবে ঝুলিও নিয়ে নিক; এবং যার নেই, সে নিজের পোষাক বিক্রি করে তলোয়ার কিনুক। ৩৭ কারণ আমি তোমাদের বলছি, এই যে কথা শাস্ত্রে লেখা আছে, “আর তিনি অধার্মিকদের সঙ্গে গণ্য হলেন” তা আমাতে পূর্ণ হতে হবে; কারণ আমার বিষয়ে যা, তা পূর্ণ হচ্ছে। ৩৮ তখন তারা বললেন, প্রভু, দেখুন, দুটি তলোয়ার আছে। তিনি তাদের বললেন, এই যথেষ্ট।
গেৎশিমানী বাগানে যীশুর করুন দুঃখ প্রকাশ।
৩৯ পরে তিনি বাইরে এসে নিজের নিয়ম অনুসারে জৈতুন পর্বতে গেলেন এবং শিষ্যরাও তার পিছন পিছন গেলেন। ৪০ সেই জায়গায় আসলে পর তিনি তাদের বললেন, তোমরা প্রার্থনা কর, যেন প্রলোভনে না পড়। ৪১ পরে তিনি তাদের থেকে কিছু দূরে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে প্রার্থনা করতে লাগলেন, বললেন, ৪২ পিতা যদি তোমার ইচ্ছা হয়, আমার থেকে এই দুঃখের পানপাত্র দূর কর; তবুও আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক ৪৩ তখন স্বর্গ থেকে এক দূত দেখা দিয়ে তাঁকে সবল করলেন। ৪৪ পরে তিনি করুন দুঃখে মগ্ন হয়ে আরো একমনে প্রার্থনা করলেন; আর তার ঘাম যেন রক্তের আকারে বড় বড় ফোঁটা হয়ে জমিতে পড়তে লাগল। ৪৫ পরে তিনি প্রার্থনা করে উঠলে পর শিষ্যদের কাছে এসে দেখলেন, তারা দুঃখের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছে, ৪৬ আর তাদের বললেন, কেন ঘুমাচ্ছ? ওঠ, প্রার্থনা কর, যেন প্রলোভনে না পড়।
যীশু শত্রুদের হাতে বন্দি হলেন।
৪৭ তিনি কথা বলছেন, এমন সময় দেখ, অনেক লোক এবং যার নাম যিহূদা সেই বারো জনের মধ্যে একজন সে তাদের আগে আগে আসছে; সে যীশুকে চুম্বন করবার জন্য তাঁর কাছে আসল। ৪৮ কিন্তু যীশু তাকে বললেন, যিহূদা, চুম্বনের মাধ্যমে কি মানবপুত্রকে সমর্পণ করছ? ৪৯ তখন কি কি ঘটবে, তা দেখে যারা তাঁর কাছে ছিলেন, তারা বললেন, প্রভু আমরা কি তলোয়ারের আঘাত করব? ৫০ আর তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি মহাযাজকের দাসকে আঘাত করে তার ডান কান কেটে ফেললেন। ৫১ কিন্তু যীশু উত্তরে বললেন, এই পর্যন্ত শান্ত হও। পরে তিনি তার কান স্পর্শ করে তাকে সুস্থ করলেন। ৫২ আর তার বিরুদ্ধে যে প্রধান যাজকেরা, ধর্মগৃহের সেনাপতি ও প্রাচীনেরা এসেছিল, যীশু তাদের বললেন, লোকে “যেমন দস্যুর বিরুদ্ধে যায়, তেমনি খড়গ ও লাঠি নিয়ে কি তোমরা আসলে? ৫৩ আমি যখন প্রতিদিন ধর্মগৃহে তোমাদের সঙ্গে ছিলাম, তখন আমায় উপরে হাত রাখেনি; কিন্তু এই তোমাদের সময় এবং অন্ধকারের কর্তৃত্ব।”
পিতর যীশুকে তিনবার অস্বীকার করেন।
৫৪ পরে তারা তাঁকে ধরে নিয়ে গেল এবং মহাযাজকের বাড়িতে আনলো; আর পিতর দূরে থেকে পিছন পিছন চললেন। ৫৫ পরে লোকেরা উঠোনের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে একসঙ্গে বসলে পিতর তাদের মধ্যে বসলেন। ৫৬ তিনি সেই আলোর কাছে বসলে এক দাসী তাকে দেখে তার দিকে এক নজরে চেয়ে বলল, এ ব্যক্তি ওর সঙ্গে ছিল। ৫৭ কিন্তু তিনি অস্বীকার করে বললেন, না, নারী! আমি ওকে চিনি না। ৫৮ একটু পরে আর একজন তাকে দেখে বলল, তুমিও তাদের একজন। পিতর বললেন, না, আমি নই। ৫৯ ঘন্টাখানেক পরে আর একজন জোর দিয়ে বলল, সত্যি, এ ব্যক্তিও তাঁর সঙ্গে ছিল, কারণ এ গালীলীয় লোক। ৬০ তখন পিতর বললেন, দেখ, তুমি কি বলছ, আমি বুঝতে পারছি না। তিনি কথা বলছিলেন, আর অমনি মোরগ ডেকে উঠল। ৬১ আর প্রভু মুখ ফিরিয়ে পিতরের দিকে নজর দিলেন; তাতে প্রভু এই যে কথা বলেছিলেন, “আজ মোরগ ডাকবার আগে তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করবে।” তা পিতরের মনে পড়ল। ৬২ আর তিনি বাইরে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
যাজকদের ও রাজ্যপালের সামনে যীশুর বিচার।
৬৩ আর যে লোকেরা যীশুকে ধরেছিল, তারা তাঁকে ঠাট্টা ও মারধর করতে শুরু করল। ৬৪ আর তাঁর চোখ ঢেকে জিজ্ঞাসা করল, ভাববাণী বল দেখি, “কে তোকে মারলো?” ৬৫ আর তারা ঈশ্বরনিন্দা করে তাঁর বিরুদ্ধে আরো অনেক কথা বলতে লাগল।
হেরোদ এবং পিলাতের হাতে যীশু।
৬৬ যখন দিন হল, তখন লোকদের প্রাচীন নেতারা, প্রধান যাজকেরা ও ব্যবস্থার শিক্ষক একসঙ্গে মিলিত হল এবং নিজেদের সভার মধ্যে তাঁকে নিয়ে এসে বলল। ৬৭ তুমি যদি সেই খ্রীষ্ট হও, তবে আমাদের বল, তিনি তাদের বললেন, “যদি তোমাদের বলি, তোমরা বিশ্বাস করবে না; ৬৮ আর যদি তোমাদের জিজ্ঞাসা করি, কোনো উত্তর দেবে না;” ৬৯ কিন্তু এখন থেকে মানবপুত্র ঈশ্বরের শক্তির ডান পাশে বসে থাকবেন। ৭০ তখন সবাই বলল, তবে তুমি কি ঈশ্বরের পুত্র? তিনি তাদের বললেন, তোমরাই তো বলছ যে, “আমিই সেই।” ৭১ তখন তারা বলল,” আর সাক্ষ্যে আমাদের কি প্রয়োজন? আমরা নিজেরাই তো তাঁর মুখে শুনলাম।”