১০
পাঁচ রাজার পরাজয় ও বিনাশ।
১ যিরুশালেমের রাজা অদোনী-ষেদক যখন শুনলেন, যিহোশূয় অয় অধিকার করে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছেন, যিরীহো ও সেখানকার রাজার প্রতি যেমন করেছিলেন, অয়ের ও সেখানের রাজার প্রতিও একই করেছেন এবং গিবিয়োন-নিবাসীরা ইস্রায়েলের সঙ্গে সন্ধি করে তাদের মধ্য বসবাস করছে; ২ তখন লোকেরা খুবই ভয় পেল, কারণ গিবিয়োন নগর রাজধানীর মত বড় এবং অয়ের থেকেও বড়, আর সেই জায়গার সমস্ত লোক বলবান ছিল। ৩ আর যিরুশালেমের রাজা অদোনী-ষেদক হিব্রোণের রাজা হোহমের, যর্মূতের রাজা পিরামের, লাখীশের রাজা যাফিয়ের ও ইগ্লোনের রাজা দবীরের কাছে দূত পাঠিয়ে এই কথা বললেন; ৪ “আমার কাছে উঠে আসুন, আমাকে সাহায্য করুন, চলুন আমরা গিবিয়োনীয়দেরকে আঘাত করি; কারণ তারা যিহোশূয়ের ও ইস্রায়েল-সন্তানদের সঙ্গে সন্ধি করেছে।” ৫ অতএব ইমোরীয়দের ঐ পাঁচ রাজা, অর্থাৎ যিরুশালেমের রাজা, হিব্রোণের রাজা, যর্মূতের রাজা, লাখীশের রাজা ও ইগ্লোনের রাজা তারা তাদের সমস্ত সৈন্যের সঙ্গে একত্র হলেন এবং উঠে গিয়ে গিবিয়োনের সামনে শিবির স্থাপন করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন। ৬ তাতে গিবিয়োনীয়েরা গিল্গলে অবস্থিত শিবিরে যিহোশূয়ের কাছে লোক পাঠিয়ে বলল, “আপনার এই দাসদের থেকে আপনার হাত সরিয়ে নেবেন না, তাড়াতাড়ি এসে আমাদের রক্ষা ও সাহায্য করুন, কারণ পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী ইমোরীয়দের সমস্ত রাজা আমাদের বিরুদ্ধে একত্র হয়েছেন।” ৭ তখন যিহোশূয় সমস্ত যোদ্ধা ও সমস্ত বলবান বীর সঙ্গে নিয়ে গিল্গল থেকে যাত্রা করলেন। ৮ তখন সদাপ্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “তুমি তাদেরকে ভয় কর না; কারণ আমি তোমার হাতে তাদেরকে সমর্পণ করেছি, তাদের কেউই তোমার সামনে দাঁড়াতে পারবে না।” ৯ পরে যিহোশূয় হঠাৎ তাদের কাছে উপস্থিত হলেন; তিনি সমস্ত রাত গিল্গল থেকে উপরের দিকে উঠছিলেন। ১০ তখন সদাপ্রভু ইস্রায়েলের সাক্ষাৎে তাদেরকে হতভম্ভ করলেন, তাতে তিনি গিবিয়োনে মহাসংহারে তাদেরকে আঘাত করে বৈৎ-হোরোণের আরোহণ-পথ দিয়ে তাদেরকে তাড়া করলেন এবং অসেকা ও মক্কেদা পর্যন্ত তাদেরকে আঘাত করলেন। ১১ আর ইস্রায়েলের সামনে থেকে পালানোর সময়ে যখন তারা বৈৎ-হোরোণের উপরে ওঠার-পথে ছিল, তখন সদাপ্রভু অসেকা পর্যন্ত আকাশ থেকে তাদের উপরে বড় বড় পাথর ফেলতে লাগলেন, তাতে তারা মারা পড়ল; ইস্রায়েল-সন্তানেরা যাদেরকে তরোয়াল দিয়ে হত্যা করল, তার থেকে বেশি লোক শিলাবৃষ্টির জন্য মারা গেল। ১২ সেই সময়ে যে দিন সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানদের সামনে ইমোরীয়দিগকে সমর্পণ করেন, সেই দিন যিহোশূয় সদাপ্রভুর কাছে অনুরোধ করলেন; আর তিনি ইস্রায়েলের সামনে বললেন, “সূর্য্য, তুমি স্থির হও গিবিয়োনে, আর চন্দ্র, তুমি অয়ালোন উপত্যকায়।” ১৩ তখন সূর্য্য স্থির হল ও চন্দ্র স্থির থাকল, যতক্ষণ না সেই জাতি শত্রুদের উপর প্রতিশোধ নিল। এই কথা কি যাশের বইতে লেখা নেই? আর মধ্য আকাশে সূর্য্য স্থির থাকল, অস্ত যেতে প্রায় সম্পূর্ণ এক দিন দেরি করল। ১৪ তার আগে কি পরে সদাপ্রভু যে মানুষের কথা এমনভাবে শুনেছেন, এমন আর আগে কোন দিনও হয়নি; কারণ সদাপ্রভু ইস্রায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করছিলেন। ১৫ পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে নিয়ে গিল্গলের শিবিরে ফিরে এলেন। ১৬ আর ঐ পাঁচ রাজা পালিয়ে মক্কেদার গুহাতে লুকিয়েছিলেন। ১৭ পরে সেই পাঁচ রাজাকে মক্কেদার গুহাতে লুকানো অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে, এই সংবাদ যিহোশূয়কে দেওয়া হল। ১৮ যিহোশূয় বললেন, “তোমরা সেই গুহার মুখে কয়েকটি বড় বড় পাথর গড়িয়ে দিয়ে সেগুলি রক্ষা করার জন্য সেখানে লোক নিযুক্ত কর, ১৯ কিন্তু তোমরা দেরি কর না, শত্রুদের তাড়া কর ও তাদের সৈন্যদের পিছনের দিক থেকে আঘাত কর, তাদেরকে তাদের নগরে প্রবেশ করতে দিও না; কারণ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাদেরকে তোমাদের হাতে সমর্পণ করেছেন। ২০ পরে যিহোশূয় ও ইস্রায়েল-সন্তানেরা তাদের সর্বনাশ পর্যন্ত মহাসংহারে তাদেরকে আঘাত করলেন, তাদের মধ্য থেকে কিছু অবশিষ্ট লোক পালিয়ে দেওয়ালে ঘেরা কিছু নগরে প্রবেশ করল। ২১ পরে সমস্ত লোক মক্কেদায় যিহোশূয়ের কাছে শিবিরে ভালোভাবে ফিরে এল; ইস্রায়েল-সন্তানদের মধ্যে কারো বিরুদ্ধে কেউ জিভ নাড়ালো না (কোনো কথা বলতে সাহস পেল না)। ২২ পরে যিহোশূয় বললেন, “তোমরা ঐ গুহার মুখ খোল এবং সেখান থেকে সেই পাঁচ জন রাজাকে বের করে আমার কাছে আন।” ২৩ তখন তারা সেইরকম করল, যিরুশালেমের রাজা, হিব্রোণের রাজা, যর্মূতের রাজা, লাখীশের রাজা ও ইগ্লোনের রাজা, এই পাঁচ জন রাজাকে সেই গুহা থেকে বের করে তার কাছে আনল। ২৪ এইভাবে তারা ঐ রাজাদেরকে যিহোশূয়ের কাছে নিয়ে আসলে পর, যিহোশূয় ইস্রায়েলের সমস্ত পুরুষকে ডাকলেন এবং যারা তার সঙ্গে যুদ্ধে গিয়েছিল, তাদের নেতাদেরকে বললেন, “তোমরা কাছে এস, এই রাজাদের ঘাড়ে পা দাও,” তাতে তারা কাছে এসে তাদের ঘাড়ে পা দিল। ২৫ আর যিহোশূয় তাদেরকে বললেন, “ভয় পেয়ো না ও নিরাশ হয়ো না, বলবান হও, ও সাহস কর; কারণ তোমরা যে শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে, তাদের সবার প্রতি সদাপ্রভু এমনই করবেন।” ২৬ তারপরে যিহোশূয় আঘাত করে সেই পাঁচ জন রাজাকে বধ করলেন ও পাঁচটি গাছে ঝুলিয়ে দিলেন; তাতে তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছে টাঙ্গান অবস্থায় থাকলেন। ২৭ পরে সূর্যাস্তের সময়ে লোকেরা যিহোশূয়ের আদেশে তাদেরকে গাছ থেকে নামিয়ে, যে গুহাতে তারা লুকিয়েছিলেন, সেই গুহার মধ্যে ফেলে দিল ও গুহার মুখে কয়েকটি বড় বড় পাথর দিয়ে রাখল; তা আজও আছে। ২৮ আর সেই দিন যিহোশূয় মক্কেদা অধিকার করলেন এবং মক্কেদা ও সেখানের রাজাকে তরোয়াল দিয়ে আঘাত করলেন; সেই জায়গার সমস্ত প্রাণীকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করলেন, কাউকেই অবশিষ্ট রাখলেন না; যেমন যিরীহোর রাজার প্রতি করেছিলেন, মক্কেদার রাজার প্রতিও তেমনই করলেন। ২৯ পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে করে মক্কেদা থেকে লিব্নাতে গিয়া লিব্নার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন। ৩০ তাতে সদাপ্রভু লিব্না ও সেই জায়গার রাজাকে ইস্রায়েলের হাতে সমর্পণ করলেন; তারা লিব্না ও সেই জায়গার সমস্ত প্রাণীকে তরোয়াল দিয়ে আঘাত করল, তার মধ্যে কাউকেই অবশিষ্ট রাখল না; যেমন যিরীহোর রাজার প্রতি করেছিল, সেই জায়গার রাজার প্রতিও একই রকম করলেন। ৩১ পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে নিয়ে লিব্না থেকে লাখীশে গিয়ে তার বিরুদ্ধে শিবির স্থাপন করে যুদ্ধ করলেন। ৩২ আর সদাপ্রভু লাখীশকে ইস্রায়েলের হাতে সমর্পণ করলেন ও তারা দ্বিতীয় দিনে তা অধিকার করে যেমন লিব্নার প্রতি করেছিল, তেমন লাখীশ ও সেই জায়গার সমস্ত প্রাণীকে তরোয়াল দিয়ে আঘাত করল। ৩৩ সেই সময় গেষরের রাজা হোরম লাখীশের সাহায্য করতে এসেছিলেন; আর যিহোশূয় তাকে ও তার লোকদেরকে আঘাত করলেন; তার কাউকেই অবশিষ্ট রাখলেন না। ৩৪ পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে নিয়ে লাখীশ থেকে ইগ্লোনে যাত্রা করলেন, আর তারা সেই জায়গার সামনে শিবির স্থাপন করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল। ৩৫ আর সেই দিন তা অধিকার করে, যেমন লাখীশের প্রতি করেছিল, তেমনি তরোয়াল দিয়ে তা আঘাত করে সেই দিন সেই জায়গার সমস্ত প্রাণীকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করল। ৩৬ পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে নিয়ে ইগ্লোন থেকে হিব্রোণে যাত্রা করলেন, আর তারা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল। ৩৭ আর তা অধিকার করে সেই নগর ও সেই জায়গার রাজাকে ও সমস্ত অধীন নগর ও সমস্ত প্রাণীকে তরোয়াল দিয়ে আঘাত করল; যেমন তিনি ইগ্লোনের প্রতি করেছিলেন, সেইরকম কাউকেই অবশিষ্ট রাখলেন না; হিব্রোণ ও সেইজায়গার সমস্ত প্রাণীকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করলেন। ৩৮ পরে যিহোশূয় ফিরে সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে নিয়ে দবীরে গিয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন। ৩৯ আর সেই নগর ও সেখানের রাজা ও তার অধীনে সমস্ত নগরগুলি অধিকার করলেন এবং তারা তরোয়াল দিয়ে আঘাত করে সেখানের সমস্ত প্রাণীকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করল; তিনি কাউকেই অবশিষ্ট রাখলেন না; যেমন তিনি হিব্রোণের প্রতি এবং লিব্নার ও সেই জায়গার রাজার প্রতি করেছিলেন, দবীরের ও সেই জায়গার রাজার প্রতিও একই রকম করলেন। ৪০ এইভাবে যিহোশূয় সমস্ত দেশ, পাহাড়ি অঞ্চল, দক্ষিণ অঞ্চল, নিম্নভূমি, পাহাড়ের পাদদেশ এবং সেই সকল অঞ্চলের সমস্ত রাজাকে আঘাত করলেন, কাউকেই অবশিষ্ট রাখলেন না; তিনি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞা অনুসারে শ্বাসবিশিষ্ট সবাইকেই সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করলেন। ৪১ এইভাবে যিহোশূয় কাদেশ-বর্ণেয় থেকে ঘসা পর্যন্ত তাদেরকে এবং গিবিয়োন পর্যন্ত গোশনের সমস্ত দেশকে আঘাত করলেন। ৪২ যিহোশূয় এই সমস্ত দেশ ও রাজাদেরকে এক দিনেই পরাজিত করলেন, কারণ ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু ইস্রায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করছিলেন। ৪৩ পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে নিয়ে গিল্গলে অবস্থিত শিবিরে ফিরে এলেন।