১৫
দেশাধ্যক্ষের সম্মুখে যীশুর বিচার।
১ আর সকাল হলে প্রধান যাজকেরা ও প্রাচীনরা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা এবং সব মহাসভা পরামর্শ করে যীশুকে বেঁধে নিয়ে পীলাতের কাছে ধরিয়ে দিলো।
২ তখন পীলাত যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি ইহূদিদের রাজা? যীশু তাঁকে বললেন, “তুমিই বললে।”
৩ পরে প্রধান যাজকেরা তাঁর উপরে নানারকম অভিযোগ করতে লাগলো।
৪ পীলাত তাঁকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি কিছুই উত্তর দেবে না? দেখ, এরা তোমার বিরুদ্ধে কত অভিযোগ নিয়ে আসছে।
৫ যীশু আর কোনো উত্তর দিলেন না; তাতে পিলাত অবাক হয়ে গেলেন;
৬ নিস্তার পর্ব্বের সময়ে তিনি লোকদের জন্য এমন এক জন বন্দিকে মুক্ত করতেন, যাকে লোকেরা চাইত।
৭ বিদ্রোহ, খুন, জখম করার অপরাধে যে সব বন্দী জেলে ছিল তাদের মধ্য বারাব্বা নামে একজন খারাপ লোক ছিল।
৮ তখন লোকরা ওপরে গিয়ে, পিলাত তাদের জন্য আগে যা করতেন, তারা তা চাইতে লাগলো।
৯ পীলাত তাদের বললেন, আমি তোমাদের জন্য ইহূদিদের রাজাকে ছেড়ে দেব, এই কি তোমাদের ইচ্ছা?
১০ কারণ প্রধান যাজকেরা যে হিংসা করে যীশুকে ধরিয়ে দিয়েছিলন সেই কথা পিলাত জানতে পারলেন।
১১ প্রধান যাজকেরা জনসাধারনকে খেপিয়ে, কাঁদিয়ে নিজেদের জন্য বারাব্বাকে ছেড়ে দিতে বলল।
১২ পিলাত উত্তর করে আবার তাদেরকে বললেন, তবে তোমরা যাকে ইহূদিদের রাজা বল, তাকে আমি কি করব?
১৩ তারা আবার চিত্কার কোরে বলল, ওকে ক্রুশে দাও।
১৪ পিলাত তাদেরকে বললেন, কেন? একি অপরাধ করেছে? কিন্তু তারা খুব জোরে চেঁচিয়ে বলল, ওকে ক্রুশে দাও।
১৫ তখন পিলাত লোকদেরকে খুশি করবার জন্য বারাব্বাকে ছেড়ে দিলেন এবং যীশুকে চাবুক মেরে ক্রুশে দেবার জন্য জনসাধারণের হাতে তুলে দিলেন।
যীশুর ক্রুশারোপণ, মৃত্যু ও সমাধি।
১৬ পরে সেনারা উঠোনের মাঝখানে, অর্থাৎ রাজবাড়ির ভেতরে, তাঁকে নিয়ে গিয়ে সব সেনাদলকে ডেকে একসঙ্গে করলো।
১৭ পরে তাঁকে বেগুনী রঙের পোশাক পরাল এবং কাঁটার মুকুট গেঁথে তাঁর মাথায় পরিয়ে দিল,
১৮ তারা যীশুকে তাচ্ছিল্য করে বলতে লাগল, ইহূদি রাজ, নমস্কার!
১৯ একটা বেতের লাঠি দিয়ে তার মাথায় মারতে লাগল, তাঁর গায়ে থুথু দিল, ও হাঁটু গেড়ে তাঁকে প্রণাম করল।
২০ তাঁকে তাচ্ছিল্য করবার পর তারা ঐ বেগুনী পোশাকটি খুলে নিল এবং তাঁর নিজের পোশাক পরিয়ে দিল। পরে তারা ক্রুশে দেবার জন্য তাঁকে বাইরে নিয়ে গেল।
যীশুকে ক্রুশে দিলেন।
২১ আর শিমোন নামে একজন কুরীনীয় লোক গ্রাম থেকে সেই পথ দিয়ে আসছিল, সে সিকন্দরের ও রূফের বাবা তাকেই তারা যীশুর ক্রুশ বহন করার জন্য বাধ্য করল।
২২ পরে তারা তাঁকে গলগথা নামে এক জায়গায় নিয়ে গেল; এই নামের মানে “মাথার খুলির বলা হয়”।
২৩ তারা তাঁকে গন্ধরস মেশানো আঙুরের রস দিতে চাইল; কিন্তু তিনি তা পান করলেন না।
২৪ পরে তারা তাঁকে ক্রুশে দিল এবং তাঁর জামাকাপড় সব ভাগ করে নিল; কে কি নেবে, এটা ঠিক করবার জন্য লটারী করলো।
২৫ সকাল নয়টার সময় তারা তাঁকে ক্রুশে দিল।
২৬ ক্রশ এর ওপর তাঁর দোষের কথা লেখা একটা ফলক ঝুলিয়ে দিলো আর তাতে লিখে দিলো, যীশু ‘ইহূদিদের রাজা’।
২৭ আর তারা তাঁর সঙ্গে দুইজন দস্যুকেও তাঁর সঙ্গে ক্রুশে বিদ্ধ করা হল, এক জন ডান পাশে আর একজন বাঁপাশে।
২৮ আর যে সব লোক সেই পথ দিয়ে যাতায়াত করছিল, তারা মাথা নাড়তে নাড়তে তাঁর নিন্দা করে বলল,
২৯ যারা খ্রীষ্টকে সেই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছিল, তারা মাথা নেড়ে নেড়ে খ্রীষ্টকে নিন্দা করে বলল, “ এইযে, তুমি না মন্দির ভেঙে ফেল, আর তিন দিনের মধ্যে তা গাঁথবে!
৩০ তবে নিজেকে বাঁচাও, যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, ক্রুশ থেকে নেমে এস।”
৩১ আর একইভাবে প্রধান যাজকেরা, ব্যবস্থার শিক্ষকেরা ও প্রাচীনেরা একসঙ্গে ঠাট্টা করে বলল, ঐ ব্যক্তি অন্য অন্য লোককে রক্ষা করত, আর নিজেকে রক্ষা করতে পারে না;
৩২ খ্রীষ্ট, ইস্রায়েলের রাজা, এখন তুমি ক্রশ থেকে নেমে এস, এই দেখে আমরা তোমায় বিশ্বাস করব। আর যারা তাঁর সঙ্গে ক্রুশে ঝুলেছে, তারাও তাঁকে অভিশাপ দিলো।
যীশুর মৃত্যু।
৩৩ পরে দুপুর বারোটা থেকে বেলা তিনটে পর্যন্ত সারা দেশ অন্ধকার হয়ে রইল।
৩৪ আর বিকাল তিনটের সময় যীশু উঁচুস্বরে চীৎকার করে বললেন, “ এলী এলী লামা শবক্তানী, অর্থাৎ ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করেছ?”
৩৫ যারা কাছে দাঁড়িয়েছিল, তাদের ভেতরে কেউ কেউ সেই কথা শুনে বলল, দেখ, ও এলিয়কে ডাকছে।
৩৬ তখন একজন দৌড়ে একখানি স্পঞ্জ সিরকায় ডুবিয়ে নিয়ে এলো এবং একটা লাঠিতে লাগিয়ে তাঁকে পান করতে দিল, দেখি, এলিয় ওকে রক্ষা করতে আসেন কি না।
৩৭ এর পরে যীশু খুব জোরে চিত্কার করে শেষ নিঃশ্বাস ছাড়লেন।
৩৮ সেই সময় ঈশ্বরের উপাসনা ঘরের পর্দা উপর থেকে নীচে পর্যন্ত ছিঁড়ে দুইভাগ হল।
৩৯ আর শতপতি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি এইভাবে যীশুকে শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে দেখে বললেন যে, সত্যই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন।
৪০ কয়েক জন মহিলাও দূর থেকে দেখছিলেন; তাঁদের মধ্যে মগ্দলীনী মরিয়ম, যাকোবের মা ও যোষির মা মরিয়ম এবং শালোমী ছিলেন;
৪১ যীশু যখন গালীলে ছিলেন, তখন এঁরা তাঁর পেছন পেছন গিয়ে তাঁর সেবা করতেন। আরও অনেক মহিলা সেখানে ছিলেন, যাঁরা তাঁর সঙ্গে যিরূশালেমে এসেছিলেন।
যীশুর কবর।
৪২ সেই দিন আয়োজনের দিন অর্থাৎ বিশ্রামবারের আগের দিন সন্ধ্যাবেলা,
৪৩ অরিমাথিয়ার যোষেফ নামে একজন নামী সম্মানীয় লোক এলেন, তিনি নিজেও ঈশ্বরের রাজ্যের অপেক্ষা করতেন; তিনি সাহস কোরে পীলাতের কাছে গিয়ে যীশুর মৃতদেহ চাইলেন।
৪৪ যীশু যে এত তাড়াতাড়ি মারা গেছেন, এতে পীলাত অবাক হয়ে গেলেন এবং সেই শতপতিকে ডেকে, তিনি এর ভেতরেই মরেছেন কি না, জিজ্ঞাসা করলেন;
৪৫ পরে শতপতির কাছ থেকে জেনে যোষেফকে মৃতদেহ দেওয়া হলো।
৪৬ যোষেফ একখানি চাদর কিনে তাঁকে নামিয়ে ঐ চাদরে জড়ালেন এবং পাথর দিয়ে তৈরী এক কবরে রাখলেন; পরে কবরের দরজায় একখানা পাথর দিয়ে আটকে দিলেন।
৪৭ যীশুকে যে জায়গায় রাখা হল, তা মগ্দলীনী মরিয়ম ও যোশির মা মরিয়ম দেখতে পেলেন।