৪
নবূখদনিৎসর রাজার দ্বিতীয় স্বপ্ন, তার অর্থ ও ফলাফল।
১ রাজা নবূখদনিৎসর তাঁর এই সংবাদ সমস্ত লোকের কাছে, সমস্ত জাতির এবং পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার লোকদের কাছে পাঠালেন, “তোমাদের শান্তির বৃদ্ধি হোক। ২ মহান ঈশ্বর আমার জন্য যে সব চিহ্ন ও আশ্চর্য্য কাজ করেছেন তা তোমাদের জানানো আমি ভালো বলে মনে করলাম। ৩ তাঁর চিহ্নগুলো কত মহান, তাঁর আশ্চর্য্য কাজগুলো কত শক্তিশালী! তাঁর রাজ্য অনন্তকালের রাজ্য এবং তাঁর রাজত্ব বংশপরম্পরায় স্থায়ী।” ৪ আমি, নবূখদনিৎসর, আমি আমার রাজবাড়িতে আনন্দের সঙ্গে বসবাস করছিলাম এবং রাজপ্রাসাদে আমি আমার সমৃদ্ধি উপভোগ করছিলাম। ৫ কিন্তু আমি একটা স্বপ্ন দেখলাম যা আমাকে ভীত করল। যখন আমি বিছানায় শুয়ে ছিলাম, তখন আমি মূর্তিগুলো দেখলাম এবং আমার মনের মধ্য বিভিন্ন দর্শনগুলো আমাকে অস্থির করে তুলল। ৬ তাই আমি একটি আদেশ দিলাম যেন আমার সামনে ব্যাবিলনের সমস্ত জ্ঞানী লোকদের আনা হয় যাতে তারা সেই স্বপ্নটাকে আমার জন্য ব্যাখ্যা করতে পারে। ৭ তখন যাদুকর, যারা মৃতদের সঙ্গে কথা বলত, জ্ঞানী লোকেরা এবং জ্যোতিষীরা আমার কাছে উপস্থিত হল। আমি তাদের কাছে স্বপ্নটা বললাম, কিন্তু তারা তা ব্যাখ্যা করতে পারল না। ৮ কিন্তু অবশেষে দানিয়েল আমার সামনে উপস্থিত হল, যাকে আমার দেবতার নাম অনুসারে বেল্টশৎসর নাম দেওয়া হয়েছিল এবং যার মধ্যে পবিত্র দেবতাদের আত্মা আছে। আমি তাকে স্বপ্নটা বললাম। ৯ “হে যাদুকরদের প্রধান বেল্টশৎসর, আমি জানি তোমার মধ্যে পবিত্র দেবতাদের আত্মা আছে এবং কোন গুপ্ত বিষয়ই তোমার কাছে খুব কঠিন নয়। আমি স্বপ্নের মধ্যে কি দেখেছি এবং এর অর্থ কি তা আমাকে বল। ১০ বিছানায় শুয়ে আমি আমার মনে এই দর্শন দেখেছিলাম। আমি তাকিয়ে দেখলাম পৃথিবীর মাঝখানে একটা গাছ দাঁড়িয়ে আছে; তা খুবই উঁচু। ১১ গাছটা বেড়ে উঠল এবং শক্তিশালী হয়ে উঠল। তার মাথাটা গিয়ে আকাশমণ্ডল স্পর্শ করল এবং এটিকে পৃথিবীর শেষ সীমা থেকেও দেখা যাচ্ছিল। ১২ তার পাতাগুলো ছিল খুবই সুন্দর ও সেটার প্রচুর ফল ছিল এবং তার মধ্যে সবার জন্য খাবার ছিল। বন্য পশুরা তার নীচে ছায়া খুঁজে পেত এবং আকাশের পাখিরা তার ডালে বাস করত; সমস্ত প্রাণীই তা থেকে খাবার পেত। ১৩ আমি বিছানায় শুয়েই আমি আমার মনের মধ্য সেই দর্শনে দেখলাম যে, একজন পবিত্র বার্তাবাহক স্বর্গ থেকে নেমে আসলেন। ১৪ তিনি উঁচু স্বরে এই কথা বললেন, ‘গাছটা কেটে ফেল এবং তার ডালগুলো কেটে দাও; তার পাতাগুলো ছেঁটে ফেল এবং তার ফলগুলো ছড়িয়ে দাও। তার তলা থেকে পশুরা পালিয়ে যাক ও ডালপালা থেকে পাখিরা উড়ে যাক, ১৫ তার শিকড়গুলোর গোড়া লোহা ও ব্রোঞ্জ দিয়ে বাঁধা অবস্থায় মাটিতে মাঠের ঘাসের মধ্যে রেখে দাও। সেটাকে আকাশের শিশিরে ভিজতে দাও এবং সেটাকে গাছপালার পশুদের মধ্যে মাটিতে বাস করতে দাও। ১৬ তার মনকে মানুষের মন থেকে পরিবর্তন করা হোক এবং সাত বছর পর্যন্ত তাকে পশুর মন দেওয়া হোক। ১৭ এই বার্তা সেই বার্তাবাহকের মাধ্যমেই দেওয়া হয়েছে, এই বিষয়টি সেই পবিত্র জনই ঘোষণা করছেন, যেন জীবিত লোকেরা জানতে পারে যে, লোকেদের রাজ্যগুলোর উপরে মহান ঈশ্বরই রাজত্ব করেন এবং সেই রাজ্যগুলির উপরে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে বসান, এমনকি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র ব্যক্তিকে তার উপরে বসান।’ ১৮ আমি, রাজা নবূখদনিৎসর, যে এই স্বপ্ন দেখেছি। এখন তুমি, হে বেল্টশৎসর, তুমি আমাকে এর অর্থ বল, কারণ আমার রাজ্যের এমন কোন জ্ঞানী লোক নেই যে আমার জন্য এর অর্থ বলতে পারে। কিন্তু তুমি পারবে, কারণ তোমার মধ্যে পবিত্র দেবতাদের আত্মা আছে।” ১৯ তখন দানিয়েল, যার নাম বেল্টশৎসর ছিল, কিছুক্ষণের জন্য হতভম্ভ হয়ে গেলেন এবং তাঁর চিন্তা তাঁকে প্রচণ্ডভাবে চিন্তিত করে তুলল। রাজা বললেন, “হে বেল্টশৎসর, স্বপ্ন অথবা তার অর্থ তোমাকে চিন্তিত না করুক।” বেল্টশৎসর উত্তর দিয়ে বললেন, “আমার প্রভু, এই স্বপ্ন তাদের জন্য হোক যারা আপনাকে ঘৃণা করে এবং এর অর্থ আপনার শত্রুদের প্রতি ঘটুক। ২০ আপনি যে গাছটা দেখেছিলেন, যেটা বিরাট ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল এবং যার মাথা আকাশ ছুঁয়েছিল এবং যেটা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত থেকেও দেখতে পাওয়া যেত, ২১ যার পাতা খুব সুন্দর ছিল ও যার প্রচুর ফল ছিল, যেন সকলকে খাবার তার মধ্যে থাকে এবং যার তলায় মাঠের পশুরা ছাওয়া খুঁজে পেয়েছিল এবং যার ডালে আকাশের পাখিরা থাকত, ২২ সেই গাছ আপনিই, মহারাজ, আপনিই সেই যিনি প্রচণ্ড শক্তিশালী হয়েছেন। আপনার মহিমা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আকাশ পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং আপনার কর্তৃত্ব পৃথিবীর শেষ সীমা পর্যন্ত পৌঁছেছে। ২৩ আপনি, হে মহারাজ, একজন পবিত্র বার্তাবাহককে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখেছিলেন এবং তিনি বলছিলেন, ‘গাছটা কেটে ফেল এবং এটিকে ধ্বংস কর, কিন্তু তার শিকড়গুলোর গোড়া লোহা ও ব্রোঞ্জ দিয়ে বেঁধে সেটাকে আকাশের শিশিরে ভিজতে দাও; সাত বছর পর্যন্ত সে মাঠের পশুদের সঙ্গে বাস করুক।’ ২৪ মহারাজ, এটিই হল স্বপ্নের ব্যাখ্যা। আমার প্রভু মহারাজ, এটি মহান ঈশ্বরের একটি আদেশ যা আপনার কাছে এসেছে। ২৫ আপনাকে লোকদের কাছ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং আপনি মাঠের পশুদের সঙ্গে বাস করবেন৷ আপনি ষাঁড়ের মত ঘাস খাবেন এবং আপনি আকাশের শিশিরে ভিজবেন। এইভাবে সাত বছর চলে যাবে, যতক্ষণ না আপনি স্বীকার করবেন যে, মানুষের রাজ্যগুলোর উপরে মহান ঈশ্বরই রাজত্ব করেন এবং তিনি সেই সব রাজ্যগুলি যাকে ইচ্ছা তাকে দেন। ২৬ যেমন শিকড় সুদ্ধ গাছটার গোড়া রেখে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, সেইভাবেই আপনার রাজ্য আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে যখন আপনি মেনে নেবেন যে, স্বর্গের ঈশ্বরই কর্তৃত্ব করেন। ২৭ তাই হে মহারাজ, আমার পরামর্শ আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য হোক। আপনি পাপ করা বন্ধ করুন এবং যা ভালো তাই করুন। নির্যাতিতদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে আপনার অপরাধ থেকে ফিরে আসুন। তাহলে হয়তো আপনার সমৃদ্ধি আরো বৃদ্ধি পাবে।” ২৮ সেই সমস্তই রাজা নবূখদনিৎসরের প্রতি ঘটল। ২৯ বারো মাসের শেষে তিনি যখন ব্যাবিলনের রাজপ্রাসাদের ছাদে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, ৩০ তখন রাজা বললেন, “এটা কি সেই মহান ব্যাবিলন নয়, যা আমার রাজধানী হিসাবে ও আমার মহিমার জন্য আমি আমার শক্তি দিয়ে তৈরী করেছি?” ৩১ যখন রাজা সেই কথাগুলো বলছিলেন, স্বর্গ থেকে একটি কন্ঠস্বর শোনা গেল, “রাজা নবূখদনিৎসর, তোমার বিরুদ্ধে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, এই রাজ্য আর তোমার অধিকারে থাকবে না। ৩২ তোমাকে লোকদের কাছ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং তুমি মাঠের বন্য পশুদের সঙ্গে বাস করবে। ষাঁড়ের মত তোমাকে ঘাস খাওয়ানো হবে। সাত বছর শেষ হবে, যতক্ষণ না তুমি স্বীকার করবে যে মহান ঈশ্বরই মানুষের রাজ্যগুলোর উপরে রাজত্ব করেন এবং সেগুলো তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন।” ৩৩ সেই বাক্য যা নবূখদনিৎসরের সম্বন্ধে বলা হয়েছিল তখনই তা পূর্ণ হল। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কাছ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হল। তিনি ষাঁড়ের মত ঘাস খেতে লাগলেন এবং তাঁর দেহ আকাশের শিশিরে ভিজতে লাগল; তাঁর চুলগুলো ঈগল পাখির পালখের মত বড় হয়ে উঠল আর তাঁর নখগুলো পাখির পায়ের নখের মত হয়ে উঠল। ৩৪ এবং সেই সময় শেষ হয়ে গেলে আমি, নবূখদনিৎসর স্বর্গের দিকে আমার চোখ তুললাম এবং আমাকে আবার আমার বুদ্ধি ফিরিয়ে দেওয়া হল। আমি মহান ঈশ্বরের প্রশংসা করলাম; যিনি অনন্তকাল স্থায়ী আমি তাঁকে সম্মান দিলাম এবং তাঁকে গৌরব দিলাম। কারণ তাঁর রাজত্ব অনন্তকাল স্থায়ী এবং তাঁর রাজ্য বংশপরম্পরায় স্থায়ী। ৩৫ পৃথিবীর সমস্ত লোক তাঁর কাছে যেন কিছুই নয়; তিনি স্বর্গদূতদের ও পৃথিবীর লোকদের মধ্য তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করেন। এমন কেউ নেই যে তাঁকে থামাতে পারে অথবা এমন কেউ নেই যে তাঁকে বলতে পারে যে, ‘তুমি কেন এটা করছ’? ৩৬ যখন আমার বুদ্ধি ফিরে এল তখন আমার রাজ্যের মহিমার জন্য আমার গৌরব ও প্রতাপ আমার কাছে ফিরে এল। আমার মন্ত্রীরা ও আমার প্রধান লোকেরা আমাকে খুঁজে বের করল এবং আমাকে আবার আমার সিংহাসনে ফিরিয়ে আনা হল এবং আরও বেশি সম্মান আমাকে দেওয়া হল। ৩৭ এখন আমি, নবূখদনিৎসর সেই স্বর্গের রাজার প্রশংসা, গুনগান ও সম্মান করি, কারণ তাঁর সমস্ত কাজ সঠিক এবং তাঁর সমস্ত পথগুলো ন্যায্য। তিনি তাদের নত করতে পারেন যারা তাদের অহংকারে চলে।