মনঃশি ও ইফ্রয়িমের জন্য আশীর্বাদ
48
1 কিছু সময় পরে যোষেফ জানতে পারলেন যে তাঁর পিতা খুব অসুস্থ| তাই যোষেফ তাঁর দুই পুত্র মনঃশি ও ইফ্রয়িমকে নিয়ে তাঁর পিতার কাছে গেলেন|
2 যোষেফ সেখানে পৌঁছালে ইস্রায়েলকে কেউ খবর দিলেন, “আপনার পুত্র যোষেফ আপনাকে দেখতে এসেছেন|” ইস্রায়েল খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু তিনি খুব চেষ্টা করে কোন মতে বিছানায় উঠে বসলেন|
3 তখন ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “কনান দেশের লূস নামক জায়গায় সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমার সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন| সেখানে ঈশ্বর আমায় আশীর্বাদ করেছিলেন|
4 ঈশ্বর আমায় বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে বহু বংশ করব| তোমার অনেক সন্তানসন্ততি হবে এবং তারা মহান হবে| এই দেশ তোমার বংশধররা চিরকালের জন্য তাদের অধিকারে রাখবে|’
5 আর এখন তোমার দুই পুত্র, আমার আসার আগেই মিশর দেশে এদের জন্ম হয়েছিল| তোমার দুই পুত্র মনঃশি ও ইফ্রয়িম আমার কাছে নিজের পুত্রের মতই হোক্| তারা আমার কাছে রূবেণ ও শিমিয়োনের মত হোক্|
6 সুতরাং ঐ দুই জন পুত্র আমারই হোক্| তারা আমার সব কিছুর অংশীদার হবে| কিন্তু এছাড়া তোমার যদি আর অন্য পুত্র থাকে তবে তা তোমারই হোক্| আর তারা ইফ্রয়িম ও মনঃশির কাছে সন্তানের মতই হোক্ অর্থাৎ ভবিষ্যতে তারা ইফ্রয়িম ও মনঃশির অধিকারভুক্ত সব কিছুরই অংশীদার হবে|
7 পদ্দম্-অরাম থেকে আসার সময় রাহেল মারা গেলেন| এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত দুঃখ পেলাম| আমরা যখন ইফ্রাথের দিকে যাচ্ছিলাম তখন কনান দেশে তিনি মারা গেলেন| আমি তাকে সেখানে ইফ্রাথ যাবার পথের ধারে কবর দিলাম|” (ইফ্রাথ বৈৎলেহেমের অপর নাম|)
8 তখন ইস্রায়েল যোষেফের পুত্রদের দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই বালকরা কারা?”
9 যোষেফ তাঁর পিতাকে বললেন, “এরা আমার পুত্ররা, ঈশ্বরই এদের আমায় দিয়েছেন|”
ইস্রায়েল বললেন, “তোমার ছেলেদের আমার কাছে নিয়ে এস| আমি তাদের আশীর্বাদ করব|”
10 ইস্রায়েল বৃদ্ধ হয়েছিলেন এবং চোখেও ভালো দেখতে পেতেন না| তাই যোষেফ দুই পুত্রকে পিতার খুব কাছে নিয়ে এলেন| ইস্রায়েল তাদের গলা জড়িয়ে চুমু খেলেন|
11 তারপর ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “আমি ভাবতেই পারি নি যে কখনও তোমার মুখ দেখতে পাব| কিন্তু দেখ ঈশ্বর আমাকে, তোমার এমনকি তোমার পুত্রদেরও দেখতে দিলেন|”
12 তারপর যোষেফ ইস্রায়েলের কোল থেকে তার পুত্রদের নিলেন এবং তারা ইস্রায়েলের সামনে মাথা নত করল|
13 যোষেফ ইফ্রয়িমকে তাঁর ডানদিকে এবং মনঃশিকে তার বাঁ দিকে রাখলেন| (সুতরাং ইফ্রয়িম ইস্রায়েলের বাম দিকে ও মনঃশি তার ডান দিকে রইল|)
14 কিন্তু ইস্রায়েল তাঁর হাত আড়াআড়ি ভাবে রেখে তাঁর ডান হাত ছোট পুত্র ইফ্রয়িমের মাথায় রাখলেন| ইস্রায়েল তাঁর বাম হাত বড় পুত্র মনঃশির মাথায় রাখলেন| মনঃশি প্রথমজাত হলেও তিনি বাম হাত তার উপরে রাখলেন|
15 ইস্রায়েল যোষেফকে আশীর্বাদ করে বললেন,
“আমার পূর্বপুরুষ অব্রাহাম ও ইসহাক আমাদের ঈশ্বরের উপাসনা করতেন|
আর সেই ঈশ্বরই সারা জীবন আমায় বহন করেছেন|
16 তিনিই সেই দেবদূত যিনি আমায় সব সমস্যা থেকে রক্ষা করেছেন|
আমার প্রার্থনা, তিনিই এই পুত্রদের আশীর্বাদ করবেন|
এখন এই পুত্ররা আমার এবং আমার পূর্বপুরুষ অব্রাহাম ও ইসহাকের নামে আখ্যাত হোক্|
আমার প্রার্থনা তারা যেন পৃথিবীতে বৃদ্ধি পযে বহু বংশ ও বহু জাতি হয়|”
17 যোষেফ যখন দেখলেন তাঁর পিতা ডান হাত ইফ্রয়িমের মাথায় রেখেছেন, তখন তিনি খুশী হলেন না| যোষেফ পিতার হাত ইফ্রয়িমের মাথা থেকে তুলে ধরে মনঃশির মাথায় রাখতে চাইলেন|
18 যোষেফ তাঁর পিতাকে বললেন, “আপনি আপনার ডান হাত ভুল জনের মাথার উপর রেখেছেন| মনঃশিই প্রথমজাত| তার উপরেই ডান হাত রাখুন|”
19 কিন্তু তাঁর পিতা তর্ক করে বললেন, “আমি জানি বৎস, আমি জানি| মনঃশি প্রথমজাত সে মহান হবে, বহুলোকের পিতা হবে কিন্তু ছোট জন বড় জনের চেয়েও মহান হবে আর তার বংশ আরও অনেক হবে|”
20 তাই ইস্রায়েল সেই দিন এই বলে আশীর্বাদ করলেন,
“ইস্রায়েল কাউকে আশীর্বাদ করতে
তোমাদেরই নাম ব্যবহার করবে|
তারা বলবে, ‘ঈশ্বর তোমাকে যেন
মনঃশি ও ইফ্রয়িমের মতো করেন|’”
এইভাবে ইস্রায়েল মনঃশির চাইতে ইফ্রয়িমকে বড় করলেন|
21 তারপর ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “দেখ আমার মৃত্যুর সময় কাছে এসে গেছে| কিন্তু ঈশ্বর তোমার সঙ্গে থাকবেন| তিনিই তোমাকে আবার তোমার পূর্বপুরুষদের দেশে নিয়ে যাবেন|
22 আমি তোমাকে যা দিলাম তা তোমার ভাইদের দিই নি| ইমোরীয়দের হাত থেকে যে পাহাড় আমি জয় করে নিয়েছিলাম তা তোমায় দিচ্ছি| আমি সেই পাহাড় জয় করতে আমার তরবারি ও ধনুক ব্যবহার করেছিলাম এবং আমি জয়ী হয়েছিলাম|”